সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি করে আনিস বেপারী (৩৩) নামের এক দোকান কর্মচারীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক আইজিপিসহ ১৪৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
শনিবার (১২ অক্টোবর) সকালে আহত ওই দোকান কর্মচারী নিজেই বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিঞা।
আনিস বেপারী মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের আলেপ বেপারীর ছেলে। থাকেন সাভারের দক্ষিণ রাজাসনে। কাজ করেন নিউমার্কেটের একটি দোকানে।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পরের যোগসাজশে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামা, মারপিট ও গুলি বর্ষণ করে গুরুতর জখমসহ হত্যাচেষ্টা ও হুকুম দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের।
এর আগে ২৮ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাভার নিউমার্কেটের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে বাম হাঁটুর নিচে, কোমর, পেটে এবং মাথার বাম দিকে গুলিবিদ্ধ হন আনিস ব্যাপারী। পরে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন এনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন ছাড়াও আসামিদের তালিকায় আরও রয়েছেন সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. আতিকুল ইসলাম, পুলিশ সদর দপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার লুৎফুল কবির, পুলিশ সদর দপ্তরের সাবেক ডিআইজি (অপারেশন) মো. আনোয়ার হোসেন, বরখাস্ত ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফী, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব, সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান, সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন টিপু, সাভার উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির হোসেন সরকার।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিঞা জানান, জুলাই-আগস্ট হত্যা এবং হত্যাপ্রচেষ্টার অভিযোগে রুজু হওয়া মামলাগুলো বেশিরভাই তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ইতোমধ্যে মামলাগুলো বিশেষায়িত সংস্থাগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে সাত মামলায় মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ৩৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ওই দিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজার আদালত তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তারও আগে বিভিন্ন মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় তাকে।
সাবকে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও শহীদুল হককে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গ্রেফতার করে। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন সেনা হেফাজতে ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তিনি সেনা হেফাজতে থাকা অবস্থায় আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এই সরকারে আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন। সরকার পতনের পরদিন তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্রীহাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের ১৯৮৬ তথা অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট (এএসপি) হিসেবে যোগ দেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আবদুল্লাহ আল-মামুন পুলিশ সদর দপ্তর, মেট্রোপলিটন পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের দায়িত্ব পালন করেছেন।
আবদুল্লাহ আল-মামুন ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর গ্রেড-১ পদোন্নতি পান। চাকরির মেয়াদ পূর্ণ করে গত বছরের ১১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আরও দেড় বছর পুলিশের সর্বোচ্চ পদে থাকেন। ফলে বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় তিনিই ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক।
Leave a Reply